Posts

Showing posts from May, 2019

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরে ও বাংলা গদ্য

: লিমন ভাই, আমি শুনেছি আগে 'য়' বর্ণ ছিল না। এটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবিষ্কার। — ঠিকই শুনেছিস। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর য বর্ণের নিচে বিন্দু বা ফুটকি দিয়ে য় বর্ণ প্রচলন করেন। : কেন, লিমন ভাই? — 'য' বর্ণের আসল উচ্চারণ হল ইঅ। সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত হয়ে বাংলা ভাষা যখন হল তখন প্রাকৃত থাকতেই য ধ্বনির উচ্চারণ হয়ে গেল জ ধ্বনির মতো, অর্থাৎ ইংরেজি j. বাংলা ভাষায় য ধ্বনির উচ্চারণ জ ধ্বনিসম। যেমন, যক্ষ উচ্চারণ জোকখো, যত উচ্চারণ জতো, যুগ উচ্চারণ জুগ। : তারপর? — কিন্তু য-এর আসল উচ্চারণ তো 'ইঅ', ইংরেজিতে y. বাংলা য-ফলার মধ্যে সে উচ্চারণটি এখনো কিছুটা আছে। যেমন: কাব্য, বাক্য, সাম্য। এখানে তো য-ফলার উচ্চারণ জ-ধ্বনির মতো হচ্ছে না। হলে তো হত যথাক্রমে কাব্‌জ, বাক্‌জ, সাম্‌জ। কিন্তু তাতো হচ্ছে না তা-ই না নীলা। এটি আরও ভালো বোঝা যায় হিন্দিতে। আমরা বাংলায় বলি, কন্যা, হিন্দিতে বলে কন্ইয়া, বাংলায় বলি গদ্য, হিন্দিতে গদ্ইয়; আমরা বলি অভ্যাস, হিন্দিতে অভ্ইয়াস। : হুম। এটা কত সালের কথা যখন বিদ্যাসাগর 'য়' বর্ণ প্রচলন করেন? — ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক ছিলে...

অটোফ্যাগি বিষয়ক প্যাঁচাল - ফারিভা

প্রতিবছর রমযান মাস আসলেই ফেসবুক অটোফ্যাগি বিষয়ক সিউডোসায়েন্স (ভ্রান্তবিজ্ঞান) পোস্টে ভর্তি হয়ে যায়। এই বিষয় সত্য যে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অর্থাৎ না খেয়ে থাকা, শরীরে অটোফ্যাগি প্রসেস ট্রিগার করে, কারণ না খেয়ে থাকলে শরীরে গ্লুকাগন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, আর সেই বাড়তি গ্লুকাগন শরীরের অন্যান্য গ্রোথ হরমোনকে ট্রিগার করে যেন শরীরের বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গানুগুলো নতুন করে তৈরী হয় এবং পুরনো কোষীয় অঙ্গানুগুলো অটোফ্যাগোসোম তৈরীর মাধ্যমে কোষ ধ্বংস করে ফেলে অটোফ্যাগির সাথে জড়িত জিনগুলোর এক্টিভেশনের মাধ্যমে। কিন্তু এর সাথে পানি না খেয়ে থাকবার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং আমি যত জার্নাল আর্টিকেল ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, সবখানেই, ইঁদুরের উপরে করা গবেষণাগুলোতে ২৪-৪৮ ঘন্টা ফিডিং এন্ড ফাস্টিং সাইকেলের মধ্যে পানি দেয়াটা নিশ্চিত করা হয়েছে। না খেয়ে থাকলে অবশ্যই বেশী পরিমাণে পানি খেতে হবে। কারণ শরীরের বর্জ্য পদার্থ পানির সাথেই কিডনী ছেঁকে বের করে দেয়। পানি সারাদিন না খেয়ে থাকাটা অটোফ্যাগি প্রসেস না। শরীরের যেটুকু এমিনো এসিড লাগবে তা রেখে দিবে, যা লাগবেনা তা বের করে দিবে। আর ক্যান্সার ও অন্যান্য অসুখের মূল বিষয়টিই হল অধ...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  গুণগত কারণেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ছিল - ড. আমিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং  প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় বিধানসভায় গৃহীত ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯২১’’-এর অনুবলে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুলাই ইংল্যান্ডের অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। প্রসঙ্গত, অক্সব্রিজ মানে অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ। শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে অক্সব্রিজের মিল রেখে কাঠামো ও ব্যবস্থাপনার বিন্যাস - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলার প্রথম কারণ, তবে একমাত্র কারণ নয়। প্রথম উপাচার্য পিজি হার্টগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষপূর্তির  সভায় বলেছিলেন,  I'm proud, I'm the first vice chancellor of Dhaka University,  the “Oxford of the East”.  ঢাকার রমনা এলাকার প্রায় ৬০০ একর জমি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।৩টি অনুষদ (কলা, বিজ্ঞান ও আইন), ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং ৩টি আবাসিক হল নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। কলা অনুষদের অধীনে ছিল ৮টি বিভাগ: সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ, ফার্সি ও ...

মূর্তি ও ভাস্কর্য - ডঃ আমিন

প্রথমে বলে রাখি,  আভিধানিক অর্থ বিবেচনায় মূর্তি ও ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্য নেই বললেই চলে। তবে প্রায়োগিক, আদর্শিক, সাংস্কৃতিক, নান্দনিক, ঐতিহ্য-কৃষ্টিক ও অনুবোধগত বিবেচনায় উভয়ের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। অবশ্য শব্দ দুটোর অর্থ প্রায় অভিন্ন হলেও উভয়ের ব্যুৎপত্তিগত ভিন্নতা রয়েছে। যা মূর্তি ও ভাস্কর্য শব্দের প্রায়োগিক পার্থক্যের সুস্পষ্টতার প্রমাণ দেয়। ভাস্কর- সং ভাস্+কৃ+অ= ভাস্কর>ভাস্কর্য; মূর্তি- সং মূর্ছ্+তি। ভাস্কর্যের সঙ্গে শিল্পকর্মের  প্রাধান্য আর  মূর্তির সঙ্গে  পূজার প্রাধান্য পরিদৃষ্ট হয়। তাই  লেখাটি পড়ার আগে আভিধানিক অর্থের সঙ্গে ব্যুৎপত্তি ও   প্রায়োগিক বিষয়টা গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী ‘মূর্তি’ বা ‘মূরতি’ শব্দের অর্থ হচ্ছে - দেহ, আকৃতি, রূপ, প্রতিমা।  ইংরেজিতে মূর্তি শব্দের প্রতিশব্দ Statue। ভাস্কর  শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, প্রস্তরাদি থেকে মূর্তি প্রভৃতি নির্মাণকারী, যে ব্যক্তি প্রস্তরাদি প্রভৃতি থেকে মূর্তি নির্মাণ করে। ইংরেজি ভাষায় ভাস্কর শব্দের প্রতিশব্দ হচ্ছে Sculptor। এক...

মহানবী কর্তৃক মাছির এক পাখায় জীবাণু ও আরেক পাখায় প্রতিষেধক - এমন ডাহা মিথ্যা ও উদ্ভট পরামর্শ দান

♨ ভূমিকাঃ বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের বৈরিতার সম্পর্ক চিরন্তন কেননা বিজ্ঞান বিশ্বাস করে সন্দেহ ও সংশয়কে ভিত্তি করে রহস্যমোচনে পক্ষান্তরে ধর্ম বিশ্বাস করে চোখ বন্ধ করে সকল রহস্যকে আল্লাহর কাজ বলে ধরে নিতে। অর্থাৎ ধর্মের মাধ্যমে কখনই রহস্যমোচন হতে পারে না। এখানেই বিজ্ঞান জয়যুক্ত এবং ধর্ম পরাজিত। আজকে আমরা আলোচনা করব মাছির এক পাখায় জীবাণু ও আরেক পাখায় প্রতিষেধক আছে  - নবী মোহাম্মদের এমন বক্তব্য আসলেই বৈজ্ঞানিক কী না।   সর্বশ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ বলে অভিহিত বুখারী শরীফে রয়েছে - Narrated Abu Huraira: The Prophet (ﷺ) said "If a house fly falls in the drink of anyone of you, he should dip it (in the drink) and take it out, for one of its wings has a disease and the other has the cure for the disease." সূত্রঃ http://quranx.com/Hadith/Bukhari/DarusSalam/Hadith-3320/ বাংলা অনুবাদঃ আবু হুরাইরা বর্ণিত, মহানবী (স) বলেন “যদি তোমাদের কোন পানপাত্রে হাউজ ফ্লাই বা মাছি পড়ে যায় তবে তোমরা সেটিকে সেই পানীয়তে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে আবার তুলে নেবে কারণ মাছির এক পাখায় আছে অসুখ আর আরেক পাখায় আছে প্র...

নাম সমাচার

ইসলামের প্রচলন শুরু হয় ৬১০ খৃষ্টাব্দ থেকে (নবী মুহাম্মদ (সা.) এর বয়স যখন ৪০)। তখন নবী সহ যে সকল মানুষ জীবিত ছিল তারা জন্মের সময় কি মুসলমান ছিল? ছিল না। তারা ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হয়ে কি তাদের নাম পাল্টে ফেলেছিলো? না ফেলেনি। তাদের জন্মের সময় তাদের যে নাম রাখা হয়েছিলো সেই নামসমূহ কি আদৌ ইসলামী নাম হতে পারে? বরং যদি দাবি করা হয় যে ঐ সকল নাম খাঁটি প্যাগানদের নাম তাহলে তা অস্বিকার করার কোন পথ খোলা থাকবে না। বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম পরিবারে সন্তানদের নাম রাখা হয় বিখ্যাত সাহাবিদের নামে। সেইসব সাহাবাদের জন্মের সময় কি তাদের ইসলামী নাম ছিল? অবশ্যই তাদের নাম রাখা হয়েছিলো প্যাগান  ধর্ম, ঐতিহ্য অনুসরণে। “আব্দুল্লাহ” নামটি সবথেকে বেশি সহী ইসলামী নাম। আব্দুল্লাহ ছিলেন নবীজির পিতা যিনি নবীজির জন্মেরও আগে মারা যান। খেয়াল রাখতে হবে, আব্দুল্লাহ পৌত্তলিক হিসেবেই মারা যান। আব্দুল্লাহ নামের অর্থ আল্লাহর দাস। কিন্তু কোন আল্লাহ্‌র দাস? তখনও ইসলামের জন্মও হয়নি এবং ইসলামের প্রচারকেরও জন্ম হয়নি। ইসলামের পূর্ববর্তী ইহুদী-খৃষ্টান ধর্মেও আল্লাহ বলে কোন শব্দ-ই নেই। এই আল্লাহ্‌ সেই প্যাগানদের মধ্যে প্রচলিত আল্...

বাকশাল

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আশিভাগ শিক্ষিতমূর্খের ধারণা বাকশাল একটা স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থা। তাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এই বাকশাল জুজু নিয়ে আসেন তাদের বক্তৃতায় বয়ানে। এমনকি বর্তমান শাসনব্যবস্থাকেও অনেকে তুলনা করেন সেই আদলে। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে খোদ আওয়ামী লীগের প্রচুর নেতাকর্মী বাকশাল বলতে আসলে কি বোঝায় তা জানেন না। তারা তাদের প্রতিপক্ষের খোঁচা নিরবে সহ্য করেন এবং মনে মনে রুষ্ট হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর। কী এক পাপের বোঝা যেন চাপিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এই বিভ্রান্তির নেপথ্যে কিছু মুখরোচক উপাদানও আছে। যেমন তাজউদ্দিন আহমেদের একটি উক্তির কথা শোনা যায়, তিনি নাকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর বলেছিলেন বাকশালই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু ডেকে এনেছে। কিংবা বঙ্গবন্ধু এই বাকশাল অবলম্বন করার সময় তিনি বুঝেছিলেন বঙ্গবন্ধু তার মৃত্যু ডেকে এনেছেন। কথাটা যদি সত্যিও হয়, তাহলে বলতে হবে তাজউদ্দিন ভুল বলেননি। তবে তার এই উক্তি যে ছলে প্রয়োগ করা হয়, সেভাবেও মোটে কথাটা তিনি বলেননি। আরও আছে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানীর বিখ্যাত উক্তি। তিনি নাকি সংসদে দাড়িয়ে ...

মানুষ কি চাঁদে যায়নি? জেনে নিন সকল প্রশ্নের উত্তর!

Image

গর্ভাবস্থায় গ্রহণের কুপ্রভাব: কুসংস্কার বনাম বৈজ্ঞানিক সত্য

Image
অন্য সব ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনার মতো গ্রহণও সবসময় জনসাধারণের কাছে এক অপার রহস্যের আধার হয়ে থেকেছে। সূর্য বা চাঁদ চোখের সামনে একটু একটু করে আড়াল হতে থাকা, দিনের বেলা হঠাৎ চারিদিক অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া, চাঁদ লালচে রং ধারণ করা, ভৌতিক সবুজাভ জ্যোতির্বলয় তৈরি হওয়া ইত্যাদি সবকিছুই হাজার বছর ধরে মানুষকে অভিভূত করে এসেছে। আর এই রহস্যময় ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ না জানার কারণে জন্ম নিয়েছে অনেক মনগড়া কাহিনী আর কুসংস্কার। গ্রহণের রহস্যময়তা একদিকে যেমন মানুষকে এর প্রতি কৌতূহলী করে তুলেছে, তেমনি মানুষের কল্পনাবিলাসী মনে জন্ম দিয়েছে বিচিত্র সব কল্পকাহিনীর; source: virtualtelescope.eu গ্রিকরা মনে করতো, সূর্যগ্রহণ হচ্ছে স্রষ্টার রাগ এবং আসন্ন মৃত্যু ও ধ্বংসের পূর্বাভাস। গ্রহণের ইংরেজি পরিভাষা Eclipse এসেছেও গ্রিক শব্দ Ekleipsis থেকে, যার অর্থ রহস্যময় বা পরিত্যক্ত। এদিকে চীনের লোকেরা বিশ্বাস করতো, স্বর্গীয় ড্রাগন সূর্যকে গ্রাস করে নেওয়ার ফলে সূর্যগ্রহণ হয়। গ্রহণ বা Eclipse এর চীনা পরিভাষা হচ্ছে chih বা shih, যার অর্থ খাওয়া। প্রাচীন চীনের লোকদের বিশ্বাস ছিল ড্রাগন সূর্যকে গ্রাস করার ফল...